প্রতিযোগিতা-৩৯ || "মুখরোচক টক-ঝাল কাঁচালঙ্কা ভর্তা রেসিপি"
নমস্কার
যেকোনো প্রতিযোগিতা মানেই আলাদা অনুভূতির কিছু।প্রথমত আমি ভেবেছিলাম প্রজেক্ট করার চাপে হয়তো এইবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেই পারবো না।উপকরণ সংগ্রহ করা থাকলেও সময় আর হয়েই উঠছিল না।তবুও আমি যেহেতু রেসিপি তৈরি করতে খুবই ভালোবাসি তাই শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করে পারলাম না। যদিও বেশ চাপের হয়ে গিয়েছিল তবুও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে আমি খুবই খুশি।এইজন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাই আমাদের শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় @rme দাদাকে।এছাড়া অনেক ধন্যবাদ জানাই "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির সকল এডমিন ও মডারেটর দাদা ও দিদিদেরকে এত সুন্দর প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।
মুখরোচক টক-ঝাল কাঁচালঙ্কা ভর্তা রেসিপি:
ভারতে আমরা যাকে কাঁচালঙ্কা বলি বাংলাদেশের ভাষায় সেটা আবার কাঁচা মরিচ।যাইহোক না কেন ঝাল তো ঝালই তাইনা!আর আমি একজন ভীষণ ঝালপ্রেমী মানুষ সঙ্গে আমার পরিবারও।এখন চারিদিকে কাঁচালঙ্কা নিয়ে হট্টগোল পড়ে গেছে।কাঁচালঙ্কার দাম যা বেড়েছে তাতে নাকি কাঁচালঙ্কা খাওয়াটা অনেকটা বিলাসিতার মতোই।তো সেই কাঁচালঙ্কা নিয়েই চলে আসলাম সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি ভর্তা রেসিপি প্রস্তুত করে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে।প্রথমত আমি কাঁচালঙ্কাগুলি 350 টাকা কিলো দরে কিনে এনেছি।এরপর আমি কাঁচালঙ্কার সঙ্গে ব্যবহার করেছি সাড়ে 7 বছরের পুরোনো তেঁতুল।
কাঁচা মরিচের অনেক গুনাগুন রয়েছে।এটিতে ভিটামিন এ থাকায় এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ফুসফুসকে সুস্থ রাখে।পুরোনো তেঁতুলে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান।তেঁতুল শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।যেমন- পুরনো তেঁতুল খেলে আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা ও পেট গরমে উপকার পাওয়া যায়। পুরনো তেঁতুল খেলে কাশি সারে।তেঁতুলের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও সাহায্য করে।তো কাঁচালঙ্কা ও পুরোনো তেতুলের যুগলবন্দিতে ভর্তা রেসিপিটি খুবই মুখরোচক ও টেস্টি খেতে হয়েছিল।আশা করি আমার তৈরি ভর্তা রেসিপিটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।তো চলুন রেসিপিটা শুরু করা যাক---
উপকরণসমূহ:
ক্রমিক নং | উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|---|
1 | কাঁচালঙ্কা | 150 গ্রাম |
2 | পুরোনো তেঁতুলের কাঁথ | 3 টেবিল চামচ |
3 | পেঁয়াজ কুচি | 2 টি |
4 | রসুন | 8 কোয়া |
5 | লবণ | 1/2 টেবিল চামচ |
6 | সরিষার তেল | 4 টেবিল চামচ |
7 | জল | সামান্য পরিমাণ |
প্রস্তুতপ্রণালি:
ধাপঃ 1
প্রথমে আমি পুরোনো তেঁতুলগুলি একটি পাত্রে নিয়ে নিলাম।এরপর 2-3 চামচ জল দিয়ে তেঁতুল ভিজিয়ে নিলাম।
ধাপঃ 2
এখন ভালোভাবে হাত দিয়ে পুরোনো তেতুলের কাঁথ বের করে নিলাম।
ধাপঃ 3
এখন তেঁতুলের শক্ত অংশগুলি বেছে ফেলে দিলাম।তো তেঁতুলের সফট কাঁথগুলি আমার বের করে নেওয়া হয়ে গেছে।
ধাপঃ 4
এবারে আমি কিছু কাঁচালঙ্কার বোটা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিলাম।
ধাপঃ 5
কাঁচালঙ্কাগুলি একটি বটির সাহায্যে ফালি ফালি করে কেটে নিলাম।
ধাপঃ 6
এরপর কাঁচালঙ্কার ভিতর থেকে সমস্ত দানা ছুড়ির সাহায্যে বের করে ফেলে দিলাম।
ধাপঃ 7
তো কাঁচালঙ্কাগুলি থেকে এভাবে আমি সমস্ত দানা পরিষ্কার করে নিলাম।
ধাপঃ 8
এখন চুলার মিডিয়াম আঁচে একটি পরিষ্কার কড়াই বসিয়ে দিলাম।কড়াই গরম হয়ে গেলে তার মধ্যে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে হালকা গরম করে নিলাম।
ধাপঃ 9
এবারে কড়াইতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিলাম।
ধাপঃ 10
পেঁয়াজ হালকা নেড়েচেড়ে তার মধ্যে গোটা রসুনের খোসা ছাড়ানো কোয়াগুলি দিয়ে দিলাম।
ধাপঃ 11
এরপর পেঁয়াজ কুচি ও রসুন হালকা বাদামি রঙের করে ভেঁজে নিলাম।
ধাপঃ 12
এখন একটি পাত্রে ভেঁজে নেওয়া পেঁয়াজ কুচি ও রসুনগুলি তুলে নেব।
ধাপঃ 13
এরপর আমি পুনরায় কড়াইতে তেল দিয়ে কাঁচালঙ্কা দিয়ে দিলাম।
ধাপঃ 14
কাঁচালঙ্কাগুলি নেড়েচেড়ে ভেঁজে নিলাম কয়েক মিনিট ধরে।
ধাপঃ 15
এখন ভেঁজে নেওয়া কাঁচালঙ্কাগুলি নামিয়ে নিলাম একটি পাত্রে।
ধাপঃ 16
এবারে আমি শীল-পাটা নিয়ে নিলাম।শীল-পাটা ধুয়ে নিয়ে ভাঁজা পেঁয়াজ-রসুন নিয়ে নেব।
ধাপঃ 17
এখানে আমি পেঁয়াজ-রসুনগুলি মিহি করে শীল-পাটার সাহায্যে হাত দিয়ে বেঁটে নিয়ে একটি পাত্রে তুলে নিয়েছি।
ধাপঃ 18
এখন ভেঁজে নেওয়া কাঁচালঙ্কাগুলি নিয়ে নিলাম এবং পরিমাণ মতো লবন নিয়ে নিলাম।
ধাপঃ 19
লবণ ও কাঁচালঙ্কাগুলি একইভাবে মিহি করে বেঁটে নিলাম শীল-পাটার সাহায্যে।
ধাপঃ 20
এরপর আমি সবগুলো বেঁটে নেওয়া উপকরণ একটি পাত্রে নিয়ে নিলাম।
ধাপঃ 21
সবশেষে আমি সরিষার তেল নিয়ে নিলাম এক চামচ।
ধাপঃ 22
এরপর সবগুলো উপকরণ একত্রে হাত দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিলাম।
শেষ ধাপঃ
তো তৈরি করা হয়ে গেল আমার "মুখরোচক টক-ঝাল কাঁচালঙ্কা ভর্তা রেসিপি"।
পরিবেশন:
এবারে এটি গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।রেসিপিটি খুবই মুখরোচক ও সুস্বাদু হয়েছিল খেতে।এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে আমারও খুবই ভালো লেগেছে।আশা করি আপনাদের কাছেও অনেক ভালো লাগবে আমার আজকের ভর্তা রেসিপিটি।সকলে ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ সকলকে🌸🌸🌸
পোষ্ট বিবরণ:
বিষয় | মুখরোচক টক-ঝাল কাঁচালঙ্কা ভর্তা |
---|---|
শ্রেণী | রেসিপি |
ডিভাইস | poco m2 |
ফটোগ্রাফার | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
টুইটার লিংক
বাপরে বাপ দিদি কাঁচা লঙ্কার যে দাম। এত দাম দিয়ে কি আর কাচাঁ লঙ্কা খাওয়া যায়? বেশ সুন্দর একটি রেসিপি আজ আপনি শেয়ার করেছেন। মনে হচ্ছে এ রকমের রেসিপি দিয়ে নিমিষেই দুই প্লেট ভাত খাওয়া যাবে। হি হি হি
ঠিক বলেছেন আপু,দাম যাই হোক না কেন রেসিপিটি খুবই সুস্বাদু হয়েছিল।ধন্যবাদ আপনাকে।
ওরে বাবারে....😰 সাড়ে সাত বছরের পুরনো তেঁতুল কই পেয়েছো তুমি.....?
আসলে আমি যখন ছোটবেলা তেঁতুল খেতে যেতাম তখন ঠাকুর দাদা বলতো যে তেঁতুল খাস না ব্রেন নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তেতুলের যে এত গুণ সেটা যদি তখন ঠাকুর দাদাকে বোঝাতে পারতাম তাহলে হয়তো তেঁতুল খেয়ে মজা করতে পারতাম ছোটবেলায়।
তোমার তৈরি করা ভর্তাটা আমার কাছে নতুন নয়, কমন। কারণ ছোটবেলায় দেখতাম ঠাকুরমা ঠিক এরকম করে তেঁতুল ভর্তা করতো।
দাদা,এই তেঁতুলগুলি মামা বাড়ি থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিল।তাই মাঝে মাঝেই একটু করে খাই,এভাবে সাড়ে সাত বছর হয়ে গেছে।তেঁতুল যত পুরোনো হয় তার উপকারীতা ততই বেড়ে যায়।ধন্যবাদ দাদা।
কাঁচা মরিচের দাম যেভাবে বেড়েছে কমার কোন নাম নেই। আপনি তো দেখছি ৩৫০ টাকা দিয়ে কাঁচা মরিচের কিলো কিনে এনে, এই ভর্তাটা তৈরি করেছেন। কাঁচা মরিচ দিয়ে যদি এরকম ঝাল ভর্তা তৈরি করা হয় তাহলে কি রকম ঝাল হবে আমি তো তা ভাবছি। মনে হচ্ছে এই রেসিপিটা অনেক বেশি ঝাল হয়েছিল। ঝাল ভর্তা রেসিপি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন সম্পূর্ণটা দেখে ভালো লেগেছে আমার কাছে।
সত্যিই আপু,খুবই ঝাল হয়েছিল।কিন্তু টক-ঝালের কম্বিনেশন দারুণ টেস্টি লেগেছিল খেতে।ধন্যবাদ আপনাকে।
কাঁচামরিচের দাম যেভাবে বেড়েছে, কাঁচামরিচ খাওয়া একেবারে মুশকিলের ব্যাপার হয়ে পড়েছে দিদি। তবে আপনি তো দেখছি কাঁচা মরিচ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ভর্তা রেসিপি তৈরি করেছেন। ঝাল আমার অনেক বেশি পছন্দের। আপনি তো শুধুমাত্র কাঁচামরিচ দিয়েছেন। ভাবতেই অবাক লাগছে এখানে কতটাই না ঝাল হয়েছে তাহলে। রেসিপিটা দেখে আমার কাছে ভালো লেগেছে। বিশেষ করে আপনার অংশগ্রহণ দেখে ভালো লাগলো।
হ্যাঁ ভাইয়া, অনেক ঝাল হয়েছিল।চেষ্টা করেছি নিয়ম মেনে ঝাল ঝাল করার ।আপনার ঝাল পছন্দের জেনে খুবই ভালো লাগলো, ধন্যবাদ ভাইয়া।