গ্রীষ্মকালে সুস্থ থাকার উপলক্ষ্যে দৈনন্দিন জীবনযাপনের কিছু টিপস।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
এই তো কয়েকদিন আগে শীতের মরশুম ছিল আর আমরা সবাই শীতে হি হি করে কাঁপছিলাম। দেখতে দেখতে কেমন দিন চলে।যায় তাই না? ফাল্গুন পেরিয়ে চৈত্র আসতে না আসতেই গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ শুরু হয়ে গেছে৷ সিয়ামের পোস্টে তো দেখলাম নীলফামারিতে চল্লিশ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। এখনই যদি এই অবস্থা হয় তবে পরে কি হবে?
শীতকালে যতই ভাজাপোড়া খাই বা মাছ মাংস ডিম ইত্যাদি সমস্ত ধরনের খাবার যত বেশি খাই না কেন হজমের কোন সমস্যা হয় না কিন্তু গ্রীষ্মকালে আমাদের সবদিক থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। তা না হলে শরীর খারাপ বা হঠাৎ স্ট্রোক ইত্যাদি আমাদের পিছু ছাড়বে না। তাই ভাবলাম আজকে আপনাদের সাথে গ্রীষ্মকালীন দিনগুলোতে কিভাবে সুস্থ থাকা যায় সেই উপলক্ষে একটি প্রতিবেদন লিখি।
ভারতের ঋতুচক্রে গ্রীষ্মকাল এক দীর্ঘ, তপ্ত এবং অনেকাংশে ক্লান্তিকর ঋতু। এই সময় সূর্যের তেজ বেড়ে যায়, তাপমাত্রা প্রায়শই ৪০ ডিগ্রির ওপরে পৌঁছায়। গরমের দাপটে শুধু প্রকৃতি নয়, মানুষের শরীর ও মনেও পড়ে তার প্রভাব। তাই গ্রীষ্মকালকে মোকাবিলা করতে হলে জীবনযাত্রায় কিছু সচেতন পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।
প্রথমত, গ্রীষ্মকালে শরীরের জলীয় ভারসাম্য রক্ষা করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এই সময় অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে জল ও লবণ বেরিয়ে যায়, ফলে ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এর থেকে বাঁচতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, ডাবের জল, লেবুজল, ফলের রস এবং জলসমৃদ্ধ ফল খাওয়া উচিত। তরমুজ, খরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি এই সময় শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। সাথে ডিটক্স ওয়াটারও খাওয়া যেতে পারে দিনে এক থেকে দুই লিটার। এতে শরীর খুবই ফ্রেস থাকে এবং এনার্জিও বজায় থাকে। আমি কোন কোন ব্লগে ডিটক্স ওয়াটারের রেসিপি দিয়ে দেব।
দ্বিতীয়ত, গ্রীষ্মের দুপুরে তাপমাত্রা চরমে পৌঁছায়। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV rays) সরাসরি চামড়ার ক্ষতি করতে পারে এবং সানস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এই সময় বাইরে বের হওয়া এড়ানো ভালো। বেরোলে অবশ্যই ছাতা, সানগ্লাস ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
এছাড়া হালকা রঙের, ঢিলেঢালা সুতির পোশাক শরীরের জন্য আরামদায়ক ও ঘামশোষণকারী। ছোটবেলায় বিজ্ঞান বইতে পড়েছিলাম মনে আছে সাদা জামা গ্রীষ্মকালের জন্য উপযুক্ত কারণ কি মনে আছে? চলুন তবে আরেকবার বলে দিই।
সূর্যের আলোতে থাকে সাত রঙের মিশেল, যাকে আমরা বলি রামধনু বা রংধনু। এখন, গাঢ় রঙ যেমন কালো, নীল বা গাঢ় সবুজ—এই সব রং সূর্যের আলো শুষে নেয়। ফলে সেই কাপড় গরম হয়ে যায়, আর গায়ের গরমও বেড়ে যায়।
কিন্তু সাদা রঙ সব রঙের আলো প্রতিফলিত করে, মানে ফিরে পাঠিয়ে দেয়। তাই সাদা জামাকাপড়ে সূর্যের তাপ তেমন আটকে থাকে না, শরীর ঠান্ডা থাকে, গরমও কম লাগে।
আর একটা সুবিধা আছে—সাদা বা হালকা রঙে ঘাম কম চোখে পড়ে, তাই গ্রীষ্মে আরাম তো দেয়ই, দেখতে-শুনতেও ছিমছাম লাগে।
গ্রামের মুরুব্বিরা, গরমের সময় কেন ধুতি-পাঞ্জাবি, আর মেয়েরা কেন পাতলা সাদা শাড়ি পরতো—এই তার পিছনের কারণ। বিজ্ঞান আর অভিজ্ঞতা মিলে যা তৈরি করে, তা-ই আমাদের প্রাচীন জীবনবোধ।
তবে শুধু যে সাদা বা হাল্কা রঙের জামা উপকারি তা নয়, সুতির জামাও পরা দরকার কারণ, সুতির জামা ঘাম শোষে, তাই গা শুকনো থাকে বাতাস চলতে দেয়, শরীর ঠান্ডা থাকে। ত্বকে আরাম দেয়, চুলকানি কমায়।হালকা, তাই পরে ভালো লাগে ধুতে-শুকোতে সহজ।
তৃতীয়ত, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন। ভারী, তেল-ঝাল খাবার গরমে হজম হয় না এবং শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে। বরং হালকা ভাত, ডাল, শাক-সবজি, টক দই, পান্তাভাত—এসব সহজপাচ্য ও ঠান্ডা প্রকৃতির খাবার খেলে শরীর সুস্থ থাকে। বাইরে রাস্তার ধুলোবালি ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়ানো প্রয়োজন। ভাজাপোড়া থেকে শুরু করে অতিরিক্ত মাংস, যত কম খাই ততই ভালো।
মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় গরমের দিনে প্রায় রোজই রাতে জলঢালা ভাত খাওয়া হত। আর এতে শরীর বেশ ঠান্ডা থাকত। আমরা যেহেতু ধান উৎপাদিত অঞ্চলে বসবাস করি তাই আমাদের ডায়েটে স্বাভাবিকভাবেই ভাতের প্রচলন থাকা দরকার। কারণ প্রকৃতির সেই সমস্ত জায়গায় ঠিক সেই সমস্ত ফসলি উৎপাদন করতে সক্ষম হয় যেখানেই তার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমি এখনো মাঝেমধ্যেই পান্তা ভাত খেয়ে থাকি এবং বেশ ভালই লাগে খেতে বিশেষ করে সপ্তাহ আনতে এবার ছুটির দিনগুলোতে দুপুর বেলাতে খেতে ভীষণ ভালো লাগে।
চতুর্থত, গ্রীষ্মকালে যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া দরকার। শরীর গরমে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাই রাতে নিরবিচারে ঘুম এবং মাঝে মাঝে বিশ্রাম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে।
দিনের বেলায় ঘর ঠান্ডা রাখতে পর্দা টেনে, জানালা খুলে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা উচিত। অনেকেই কুলার বা ফ্যান ব্যবহার করে স্বস্তি পেয়ে থাকেন।
সবশেষে, এই সময়ে শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থদের জন্য আলাদা যত্ন নেওয়া উচিত। গ্রীষ্মে সংক্রামক রোগ যেমন হিট র্যাশ, খাদ্যবাহিত অসুখ ইত্যাদির প্রকোপও দেখা যায়। তাই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, বারবার হাত ধোয়া এবং টাটকা খাবার খাওয়া অপরিহার্য।
গ্রীষ্মকাল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক জীবনযাত্রা ও কিছু সহজ সতর্কতা মেনে চললে এই ঋতুকেও আরামদায়ক ও উপভোগ্য করে তোলা সম্ভব। সর্বপরি নিজেকে ও নিজেদের পরিবারকে সুস্থ রাখা সম্ভব। প্রকৃতিকে হারানো যায় না, আর প্রকৃতির সাথে লড়াইও করা যায় না। আজ আমাদের নানান কারণে প্রকৃতি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তার ফল আমরাই ভুগছি।তবে নিজের আচরণ ও অভ্যাসে সামান্য রদবদল এনে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা যায়—সেই তো প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ।
সব শেষে দুটো কথা বলব, প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগান প্রকৃতিকে আবারো সবুজ করে তোলার তাগিদে। এবং পশু পাখিদের জন্য জল সরবরাহ করতে একদমই ভুলবেন না। বাড়ির ছাদে বা উঠোনে ধামরাই করে জল রেখে দিলে পশুপাখিরা নিজেদের মতো এসে খেয়ে যেতে পারে বা প্রয়োজনে স্নান করতে পারে। নিজেদের সাথে সাথে প্রকৃতির ও তার অন্যান্য সৃষ্টির প্রতি নজর রাখাটা আমাদেরই কর্তব্য কারণ মানুষ হিসেবে আমরা হয়তো সবথেকে বেশি বুদ্ধিমান।
আমার আজকের ব্লগ আশা করছি আপনাদের প্রত্যেকেরই অনেক উপকারে আসবে। এবং আপনারা সমৃদ্ধ হবেন। যাই হোক আজ এখানেই শেষ করি আপনারা সবাই ভাল থাকবেন সাবধানে থাকবেন আবার আসবো আগামীকাল নতুন কোন বিষয় নিয়ে গল্প করতে।
টা টা
আজকের সমস্ত ছবিই Meta AI এর সাহায্যে বানিয়েছি।

পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
ছবি সোর্স | Meta AI |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1908223039483109500?t=S5Lbr6eJdwUaNugSNag6zA&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1908224104034943357?t=_59f-uyVVvioakjnWpIJyw&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1908224652909965513?t=fJe7BbJ_fnsMffRMENlgtw&s=19
ঠিক বলেছেন আপু সাদা সুতি কাপড় গুলো গরমের দিনে তাপ অনেকটা কমিয়ে রাখে। এছাড়াও গরমের দিনের খাদ্য অভ্যাস আরো অনেক কিছু খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আপনার পোস্ট করে ভীষণ ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম শিখতে পারলাম। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
চেষ্টা করেছি আপু। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্ট পড়ার জন্য।
বেশ গুছিয়ে লিখেছেন গ্রীষ্মের করনীয় বিষয়গুলো। এই বিষয়গুলো যদি আমরা মেনে চলতে পারি তবে এই গরমেও আমরাও সুস্থ্য থাকবো।ধন্যবাদ সুন্দরভাবে পোস্টটি উপস্থাপনের জন্য।
শীতের পর গরমে হঠাৎ আশা এই তীব্র তাপমাত্রায় মানুষের শরীর ভীষণভাবে খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু তবু আমাদেরকে যেন সবকিছু মানিয়ে নিতে হয়। এখানে খুব সুন্দর ভাবে কিছু টিপস দিয়ে মানুষকে অনেক সুবিধা করে দিলি। আসলে গরমে মানুষকে অনেক সাবধানে থাকতে হয় এবং খাওয়া দাওয়ায় কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। তবে এখানে গ্রীষ্মের ছবিগুলি ভীষণ সুন্দর হয়েছে।
হ্যাঁ গো। জানোই তো একটু সুন্দর করে লিখতে বা প্রেজেন্ট করতে আমি বেশ ভালোবাসি। আসলে গরমে অনেকেরই শরীর বেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই ভাবলাম একটু লিখি।