আমার ভাইঝির নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার মুহুর্ত
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
দিনটা ছিল পহেলা ফেব্রুয়ারি। বইমেলার জন্য বাড়ি গিয়েছিলাম। প্রথম কয়েকদিন টানা মেলায় বসার পর বাড়ি গিয়েছি, আর অঘোরে ঘুমোচ্ছি। ভোর বেলায় আমার ভাইঝি (যাকে আমি মেহুলি বলে ডাকি, বয়স পাঁচ) এসে আমায় ঠেলাঠেলি করে ডাকছে (সামান্য কথপোকথন তুলে ধরলাম) —
মেহুলি- ওই পিসি, পিসি ওঠ (সদ্যই কথা বলতে শিখেছে, তুই তুমি বুঝতে পারে না তাই প্রায় সবাইকেই তুই বলে। হে হে হে)
আমি- কেন রে?
মেহুলি- আমায় সাজাবিনা? উথে পল(উঠে পড়)
আমি- তোর মাকে বল না।
মেহুলি- না তুই ওঠ। মা'র কাছে সাজব না।
আমি- ঘুম পাচ্ছে।
মেহুলি- আমায় সাজিয়ে দে তারপর ঘুমোবি।
আমি- কেন?
মেহুলি- আরে আমি নাচতে যাব না? কমটিশন (কমপিটিশন) আছে তো৷ তুই উঠে পড় না। সাজিয়ে দে তোকে একটা দারুণ জিনিস দেব।
তো বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই চলে৷ আর ও আমায় নানান ধরণের ঘুষ দিয়ে রাজী করাতে চায়৷ যাইহোক আমি বেশি সময় নষ্ট না করে সাজিয়ে দিয়েছিলাম।
আসলে মেয়েদের সাজাতে আমার খুবই ভালো লাগে৷ আর ও তো পুচকে। তাই ছোট্ট পেটিকোট শীতকালের জন্য হাইনেকের ওপর একটা ছোট্ট শাড়ি পরিয়ে দিয়েছি। ওর ধারণা ছিল শাড়িটা পরলেই গা চুলকোবে। কিন্তু আগের দিন পরিয়ে দেখালাম যে গা চুলকোয় না৷ হয়তো পিসি বলেই বা অন্য কোন মনের টান হেতু মেহু কিন্তু আমায় বেশ বিশ্বাস করে।
তবে শিশু হলেও সে তার ইচ্ছে খুশিই চলে৷ কেউ তাকে দিয়ে কিছু করিয়ে নেবে এমন ক্ষমতা নেই৷ সেদিন অনেক বুঝিয়ে বললাম, যে স্কুলে গিয়ে কিন্তু নাচিস। খেলবি না৷ আমায় তো মাথা নেড়ে নেড়ে চলে গেল। আনন্দের বিষয় বেশ ভালোই নেচেছে৷ ছোট মানুষ যেমনটা হয় আর কি। তবে একটা দিক খুবই ভালো যে ওর মঞ্চে উঠে কোন ভয় নেই৷ এই গুণটা হয়তো বংশ পরম্পরায় পেয়েছে। কারণ আমার মা খুবই ভালো পারফর্মার। একাধারে নাছ গান আবৃত্তি এমনকি খেলাধুলোও কোন কিছুত্র পিছিয়ে থাকতেন না। তবে আমি যদিও ঢ্যাঁড়স। কিন্তু আমার ভাইঝি মানে দাদার মেয়ে আর আমার মেয়ে দুজনেই মায়ের গুণ পেয়েছে।
সেদিন স্কুল থেকে নেচে নেচে এসে বলল "পিসি আমি নেচেছি" আমি অনেকটা আদর করে দিয়েছিলাম। দুদিন পরেই নাচের ফলাফল বেরিয়েছিল, তখনই জেনেছিলাম ও প্রথম হয়েছে। বাড়ির বাচ্চারা ভালো ফল করলে আনন্দই হয়৷ তবে এতোটাই ছোট যে আমরা কিছুই আশা করি না। নিজের মতো যতটুকু করে। আর ভালোবেসে যতটুকু করে। কারণ এইটুকু বাচ্চাকে কিই বা জোর করে শেখানো যায়?
আজ ওর মা মানে আমার বৌদি এই মেমেন্টোর ছবি পাঠালো। বুঝলাম আজ পুরষ্কার বিতরণ হয়েছে। আসলে সারাদিনের চুড়ান্ত ব্যস্ততার কারণে আমি ফোন করে উঠতে পারিনি। নইলে ভিডিও কলে মেহু আমায় দেখাতো অবশ্যই৷ ইচ্ছে আছে কাল সকালেই করব।
আপনারাও আমার মতো ওকে আশির্বাদ করুন আগামী চলার পথ যেন এমনই আলোকোজ্জ্বল হয়। সন্তানরা সকলেই ভালো থাকুক।
ছবিগুলো আমার বৌদির অনুমতিতেই ব্যবহার করলাম।
বন্ধুরা আজকের আনন্দঘন মুহুর্তটি আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিলাম। মা বলেন আনন্দ ভাগ করে নিলে দ্বিগুণ হয়। আমিও তেমনটাই বিশ্বাস করি। ভালো থাকবেন সকলে আজ আসি।
টা টা

পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1896623976748876252?t=O85dtcvKdQZu3uiHbxfR-g&s=19
ছোট মেয়ে নাচে খুব ভালো। তাইতো প্রথম হয়েছে দিদি।ভাইয়ের মেয়ে পুরষ্কার এনে দেখিয়ে দিল সে আসলে গুনী।ওর জন্য রইলো অনেক অনেক দোয়া আর ভালোবাসা।বাচ্চাদের এমন আধো আধো কথা গুলো ভারী মিষ্টি লাগে।সুন্দর অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ দিদি।
ধন্যবাদ আপু৷ ছোট মেয়েরা নাচলে খুবই ভালো লাগে দেখতে৷ আর আধো আধো কথাগুলোও।
নাচের মঞ্চে ছোট্ট পরী প্রথম হয়েছে। সত্যিই গর্বের মুহূর্ত। ভাইয়ের মেয়ে তার প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে প্রমাণ করলো যে সে সত্যিই বিশেষ। ওর জন্য রইলো অগণিত ভালোবাসা ও আশীর্বাদ। বাচ্চাদের এমন নিষ্পাপ আনন্দ আর আধো আধো কথা সবসময় মন ভরে দেয়। দিদি, এমন সুন্দর মুহূর্ত ভাগ করে নেওয়ার জন্য অনেক ভালোবাসা ।
সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন৷ ভালোবাসা পাঠালাম।
বাচ্চারা কি আর বোঝে কাকে কি সম্মোধন করতে হয়। আমার নাতিও আপনার ভাইজির বয়সের সে স্কুলে তার টিচার্কে তুই বলে। তবে আপনার ভাইজির কিন্তু বেশ সাহস। আমিতো এখনও অনেক মানুষের সামনে কথা বলতেও ভয় পাই। অনেক গুনী মেয়ে আপনার ভাইজি। সেই সাথে কনফিডেন্ট। অনেক অনেক দোয়া আর ভালোবাসা আপনার মেহুলির জন্য।
হা হা হা৷ ওই তুইটাই শুনতে ভালো লাগে।
স্টেজ কি সেটাই বোঝে না আপু। নাচতে বলেছে নেচে দিয়েছে।
এখনও তো ছোট যা করে নিজের ইচ্ছেতেই করে৷
নাচের সাজে মেহুকে তো দারুন সুন্দর দেখতে লাগছে। ছোট্ট মেহু নেচে কত সুন্দর একটা প্রাইজ নিয়ে এসেছে। ওর জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা আমার তরফ থেকে। ও অনেক বড় হয়ে উঠবে এবং মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠবে। মেহুর ছবিটাতে ওকে খুব মিষ্টি লাগছে। কারণ তুই ওকে ভীষণ সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিস।