আজকের আসরে কবিতা পাঠ করলাম। রবিঠাকুরের হঠাৎ দেখা।

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা



কেমন আছেন সবাই? আশা করি পরম করুণাময়ের কৃপায় এবং আপনাদের নিজেদের চেষ্টায় সকলেই ভালো আছেন৷ আপনাদের সকলের ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



পশ্চিমবঙ্গে আসার পর থেকেই আবহাওয়ার তফাৎ বুঝতে পারছি বেশ৷ এখানে বাতাসের আদ্রতা ও গরমে বেশ কাবু হয়ে যাচ্ছি। অনেকদিন এমন আবহাওয়ায় থাকার অভ্যেস নেই সে কথা শরীর জানান দিচ্ছে৷ তাও এতোদিন বাদে বাড়ি আসার আনন্দই আলাদা। সেই আনন্দের কাছে সব কিছুই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির খাবার, সকলের ভালোবাসা আদর যত্ন, হয়তো এক সাথে থাকা হয় না বলে এই সবের গুরুত্ব আমার কাছে খুবই দামী। গ্রামের বাড়িতে আবহাওয়া যেমনই হোক পুকুরে মাছের ছুটোছুটি, সমস্ত গাছে ফুল ফলের মেলা, সকালবেলাটায় মুগ্ধ হয়ে যাই৷ আমাদের বাড়ির সামনেই ধান জমি আছে, ধানগুলো সদ্য পাকতে শুরু করেছে। কী অপূর্ব লাগে দেখতে। এই সব কিছুই স্মৃতিতে ভরে নিচ্ছি। যাতে করে আগামী বেশকিছুদিন আবার প্রবাসে কাটিয়ে দিতে পারব৷

যাইহোক চলুন পোস্টের দিকে যাই৷

প্রতিদিনই আলাদা ধরণের বিষয়বস্তু নিয়ে আসি যাতে করে প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমার অ্যাকাউন্টে এসে একঘেঁয়ে অনুভূতি না পায়। এখানে আমি ভিডিও বলতে বেশিরভাগই রান্নার ভিডিও পোস্ট করেছি। কখনও নিজের কোন গান বা কবিতা পাঠের অডিও নিয়ে আসিনি৷ তাই আজ ভাবলাম রবিঠাকুরের হঠাৎ দেখা কবিতাটি পাঠ করি৷ প্রাক্তন সিনেমা দেখার পর থেকে এই কবিতাটি আরও অনেক বেশি পছন্দের হয়ে উঠেছে৷

received_511250861746613.jpeg
সোর্স- Meta AI

পুরো কবিতাটা নিচে দিলাম।


হঠাৎ দেখা
------------------ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
লালরঙের শাড়িতে
দালিম ফুলের মতো রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে,
আলাপ করলেম শুরু --
কেমন আছ, কেমন চলছে সংসার
ইত্যাদি।
সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের দিনের ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনোটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় --
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা।
আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে
ওর সাথিদের সঙ্গে।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
মনে হল কম সাহস নয়;
বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
"কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?
আমি বললেম, "বলব।"
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
"আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে,
কিছুই কি নেই বাকি।"
একটুকু রইলেম চুপ করে;
তারপর বললেম,
"রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।"
খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।
ও বললে, "থাক্‌, এখন যাও ও দিকে।"
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে;
আমি চললেম একা।


বন্ধুরা, আপনাদের জন্য আমার কবিতা পাঠের লিংকটা দিলাম।



কেমন লাগল শুনে অবশ্যই জানাবেন৷ অপেক্ষায় থাকব আপনাদের মন্তব্যের৷

আজ আসি? আপনারা খুব ভালো থাকবেন।

টা টা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণকবিতা পাঠ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ
ব্যবহৃত অ্যাপইনশট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

Untitled_design.png

new.gif

IMG_5055.jpg

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 months ago 

আমাদের সকলের প্রিয় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসাধারণ একটি কবিতা আবৃত্তি করেছেন আপনি। আপনার কন্ঠে দারুণ আবৃতি শুনে মুগ্ধ হলাম। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি আবৃত্তি সম্পন্ন করেছেন।

 4 months ago 

আপনি যে আমার আবৃত্তিটা পুরোটা ধৈর্য ধরে শুনলেন তার জন্য শুরুতেই আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই । রবি ঠাকুর আমাদের অত্যন্ত প্রিয় কবি। তার লেখা প্রত্যেকটা পক্তিতেই আমরা যেন নিজেদের খুঁজে পাই।

 4 months ago 

অসাধারণ কবিতা পাঠ। তোর গলার মডিউলেশন এবং সাথে কবিতাটি আবৃত্তি করার ভঙ্গিমা দুর্দান্ত হয়েছে। কবিতাটি ঠিক যেভাবে বলা উচিত ছিল সেভাবেই বললি। তাই জন্য এত শ্রুতিমধুর হয়ে উঠলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার কলম আর তোর গলা মিলেমিশে এক হয়ে গেছে।

 4 months ago 

অবশেষে শোনার সময় পেলে? আমি ভাবলাম আর বোধহয় শুনলে না৷

আনন্দ পেলাম তোমার মন্তব্যে৷

 4 months ago 

এই কবিতা টা আমার খুবই পছন্দের। এই কবিতা টা আমিও আবৃত্তি করে শেয়ার করে নিয়েছিলাম আমার বাংলা ব্লগে। মাঝে মাঝে কবিতা টা পড়ি আর মনে হয় হয়তো হঠাৎ একটা আমার প্রাক্তনের সাথে এইভাবেই ট্রেনের কামড়ায় দেখা হবে। চমৎকার আবৃত্তি করেছেন আপু। অসাধারণ লাগল।

 4 months ago 

হা হা। ওই সব কবিতাতেই সম্ভব৷ তবে অসম্ভব ভালো এই কবিতাটা। আমার ভীষণ প্রিয় লেখা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.24
JST 0.034
BTC 96239.49
ETH 2782.12
SBD 0.67