মেয়ের নতুন ক্লাসের বই নিয়ে এলাম। মনে পড়ে গেল নিজের ছোটবেলা।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
আজ সকাল থেকেই বেশ ব্যস্ততা ছিল। কারণ সকাল সকাল বাড়ির কাজকর্ম সের এই বেরিয়ে পড়েছিলাম মেয়ের স্কুলে। সেখানে নতুন ক্লাসের বই দেওয়া হচ্ছিল। বেসরকারি স্কুল যেহেতু তাই বই দেওয়ার কোন গল্প নেই আসলেই স্কুল থেকেই বই বিক্রি হচ্ছিল। মানে যেই ভেন্ডার বই বিক্রি করেন উনি স্কুলেই ইনস্টল খুলেছিলেন এবং সেখানে আমরা প্রত্যেকে এগিয়ে টাকা দিয়ে বই কিনলাম।
শুধু বই নয় যেহেতু মেয়ে প্রাইমারি থেকে হাই স্কুলে উঠে গেল তাই ওর স্কুলের ড্রেস উঠেছে তাই নতুন ক্লাসের ইউনিফর্ম দুই জোড়া কিনলাম। বিকেল বেলায় যখন বসে বসে বইগুলোতে কভার দিচ্ছিলাম তখন আমার নিজের ছোটবেলাকার কথাগুলো মনে পড়ছিল।
এখন স্টেট বোর্ডগুলোতে জানুয়ারি মাসে সেশন। আর আমার মেয়ের এপ্রিলে। তবে আমাদের সময় ছিল মে মাসের সেশন। এপ্রিলের শেষের দিকে রেজাল্ট আউট হওয়ার পরে পরেই বুকলেট দিয়ে দেয়া হতো। তার সাথে নতুন ক্লাসে ওঠা, নতুন বই পাওয়া—এসব নিয়ে এক অন্যরকম উন্মাদনা কাজ করত। আমাদের সময় ভান্ডারের কোন ব্যবস্থাপনা ছিল না গ্রামের এক বই দোকানে যাকে আমরা বই কাকু বলতাম হ্যাঁ তিনি সমস্ত বই এনে রাখতেন সাথে খাতা পেন ইত্যাদি। তোর স্কুল খোলার আগে আগেই বুকলেট নিয়ে চলে যেতাম এবং কাকুর কাছ থেকে সমস্ত বই খাতা পেন পেন্সিল নতুন পেন্সিল বক্স ইত্যাদি কিনে নিয়ে আসতাম। নতুন বইগুলো পাওয়ার পর যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগায় মন ভরে যেত। বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোতে চোখ বোলাতে বোলাতে মনে হতো, এই বছর কত কিছু নতুন শিখতে পারব!
বই হাতে পেয়েই সবচেয়ে আগে নাকের কাছে নিয়ে শুঁকে দেখতাম। নতুন বইয়ের সেই গন্ধ আজও মনে পড়ে! বাড়ি ফিরেই বইয়ের প্রথম পাতায় নিজের নাম-রোল লিখে ফেলতাম, যেন এটা শুধু আমারই সম্পদ। এরপর শুরু হতো বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো উল্টেপাল্টে দেখা—কোথায় কোন গল্প, কোন কবিতা, কোন নতুন অঙ্ক আছে।
মজার ব্যাপার হলো, তখন বইয়ের অজানা অধ্যায়গুলো দেখলেই একদিকে ভয় লাগত, আবার অন্যদিকে কৌতূহল কাজ করত। যে বিষয়গুলো নতুন ক্লাস, অন্য অন্য শিক্ষকদের পড়ানো, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়,সব মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর সময় ছিল সেটা। আমাদের সময় যেহেতু জোড় বিজোড় রোল নাম্বার অনুযায়ী সেকশন বদলে যেত তাই প্রতি ক্লাসেই আমাদের কোন না কোন নতুন বন্ধু জুটে যেত।
বইয়ের মলাট লাগানোও ছিল ছোটবেলার এক আনন্দদায়ক কাজ। মা কিংবা বড় দাদার সাহায্যে কাগজের মলাট লাগিয়ে বইগুলো যত্ন করে রাখতাম, যেন সারা বছর ভালো থাকে। আর আমাদের সময় তো এরকম কভার দেওয়া খাতা কিনতে পাওয়া যেত না আমরাই রিম খাতা কিনতাম। মানে সেগুলোতে লুজ পেজ থাকতো। আর সেই পৃষ্ঠাগুলো সেলাই করে খবরের কাগজের কভার দিয়ে বানিয়ে নিতাম নতুন খাতা। কিছু বইয়ের চমৎকার ছবি ও রঙিন পাতাগুলো আলাদাভাবে চোখে পড়ে যেত। বিশেষ করে বাংলা আর ইংরেজির বইয়ের গল্পগুলো প্রথম দিনই পড়ে ফেলতাম!
সেই দিনগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। কিন্তু নতুন বই পাওয়ার সেই শিহরণ, কৌতূহল আর আনন্দ আজ মনে পড়ে গেল। আমার মেয়ে যেভাবে সারাদিন ধরেই ইংরেজি সাইন্স এগুলো নাকি নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলছে তা দেখে মনে হলো যেন যেন সেদিনের সেই ছোট্ট আমি আবারো আমার সন্তানের মধ্যে দিয়ে বইয়ের পাতায় হরিণ গতিতে ছুটে বেড়াচ্ছি !
আসলে নতুন বই মানেই পড়াশোনার উপকরণ নয়, বরং নতুন কিছু জানার, শেখার, ও নিজের মনের দিগন্ত প্রসারিত করার এক দারুণ সুযোগ। নতুন স্বপ্নের শুরু। প্রতিটি পৃষ্ঠায় লুকিয়ে থাকে নতুন কল্পনা, নতুন চ্যালেঞ্জ, আর শেখার অসীম সুযোগ। বইগুলো শুধু পড়ার জন্য নয়, এগুলো আমাদের ভাবতে শেখায়, জানার পথ দেখায় এবং আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তোলে। বছরের শুরুতে এই নতুন বইগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা মানে পুরো বছরটাকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করা। তাই নতুন বই হাতে পাওয়ার পরই সামনে অপেক্ষা করে আরও সুন্দর কিছু শেখার এক দারুণ যাত্রা!
নতুন বই এলে আপনাদের কেমন অভিজ্ঞতা হয় তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমার পুরনো স্মৃতির গল্পগুলো আজ এখানেই শেষ করছি।
টাটা

পোস্টের ধরণ | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1907807434149867770?t=5ENU18jTjAoESSyF1A4Xsw&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1907808245412147364?t=dg4zn3BAKKZhC3NGq5N8kg&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1907808970963825100?t=SqpyQ1ZD4_SkM8zru2OJYA&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1907811826794160336?t=UHpZvNNYoIMNmsRWGdit7Q&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1907814837352280565?t=W_QqaE9sP-KZU_lnN3W9Ag&s=19
মেয়ের জন্য নতুন ক্লাসের বই এনে সুন্দর করে মলাটও বেঁধে দিয়েছো দেখে ভালো লাগলো দিদি।
নতুন ক্লাসের বই মানেই আলাদা আনন্দ আর নতুন বইয়ের গন্ধ আমার খুবই ভালো লাগে।তোমার মেয়ের জন্য শুভকামনা রইলো দিদি।
ছোটবেলায় আমাদেরও অনেক স্মৃতি তাই না? আমার পোস্ট খুঁজে পাচ্ছিলে না বলেছিলে অবশেষে পেয়েছে এবং মন্তব্য করেছ পড়ে তার জন্য তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসা জানালাম।
না দিদি,তোমার বুঝতে ভুল হয়েছে হয়তো।আমি বলেছিলাম জেনারেল চ্যাটিং এ তোমাকে আর দেখতে পাই না,কিন্তু তোমার পোষ্ট তো আমি সবসময় দেখি।অবশ্য দেখা হয় কিন্তু কমেন্ট করা হয় না তেমনভাবে আর,বর্তমানে পুশের কমেন্টের জন্য।।
ওহ আচ্ছা, হ্যাঁ গো, জেনারেল চ্যাটিং এ বেশি আস্তে পারি না। তবে আসি৷ হয়তো আমাদের সময় ম্যাচ করে না৷ কখনও কখনও আমায় মেনশন দিও। কেমন?
আচ্ছা দিদি👍.
আপনার মেয়ের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা । নতুন বছর মানে নতুন বই। আর এক রাশ আনন্দ। আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন নতুন বই পুরাতন ক্যালেন্ডার দিয়ে ্মলাট করে ডিজাইন করে নাম লিখতাম। আপনার লিখাটি পড়ে সেই কথাই মনে পড়ে গেলো দিদি। ধন্যবাদ দিদি পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আমাদের সকলের ছোটবেলা যেন একই রকম। সেই সব মধুর দিনগুলো আর ফিরে আসবে না।
ভালো থাকবেন। আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।