রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটবড় কবিতাটি পাঠ করলাম|| অডিও ব্লগ
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
কেমন আছেন সব্বাই? আশাকরি আপনারা সবাই বেশ ভালই আছেন, আমিও আছি, প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যে কেটে যাচ্ছে তাই ভালো না মন্দ বুঝেই উঠতে পারছি না। আসলে এই সময়টা বইমেলার কিছু লেখা জমা করার ইচ্ছে থাকে, ফলে অনেক লেখা লিখতে হয়। কিন্তু সারাদিন নানান কাজের ব্যস্ততায় কিছুই হয়ে উঠছে না। তাও চেষ্টা করছি কিছু কিছু লেখার কারণ যারা আমন্ত্রণ করেন তারা তো অনেক আশা নিয়েই করেন। আর দৈনন্দিন জীবনযাপন তো আছেই। একমাত্র যারা প্রবাসে থাকেন তারাই বোঝেন একা হাতে সবটা সামলানো কতটা কঠিন। এইসবের মাঝেই আমি যে কেমন আছি সে কথা না জিজ্ঞেস করার কেউ আছে না নিজের ভাববার ফুরসৎ আছে। সবাই যে যার নিজের দিকই ভাবে। দিনশেষে রোজ হিসেব করে আমার থেকে কি পায় আর কতটাই বা পায়৷
হাজার ব্যস্ততা থাকলেও আমি ভেরিফাইড হওয়ার পর চেষ্টা করি ব্লগে আর নতুনত্ব আনতে এবং ভালো কিছু করতে। আগের থেকে এনগেজমেন্টও বেড়েছে। কিন্তু দিন বাড়েনি সেই ২৪ ঘন্টাই রয়ে গেছে। হা হা হা, আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই রান্নাবান্নার কাজ সমস্ত সেরে ভাবলাম কবিতা আবৃত্তি করি। কারণ এই সপ্তাহে এখনো কোনো অডিও পোস্ট করা হয়নি। কি রেকোর্ডিং করব ভাবতে ভাবতেই মাথায় এলো ছোটদের কথা ভেবে একটি রবি ঠাকুরের লেখা পাঠ করি। কারণ সমস্ত কবিতা পাঠই বড়দের জন্য হয়ে যায়। আপনাদের ও তো বাড়িতে কচিকাঁচারা হয়েছে তাই না। তাছাড়া এই কবিতাটি এত সুন্দর বড়দেরও ভালো লাগে শুনতে। অনেকদিন আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শুনেছিলাম। আজ নিজের মতো সেটুকুই চেষ্টা করলাম।
অনেক বকবক করলাম অথচ আপনাদের সকালের শুভেচ্ছা জানানো হলো না এখনো। আমার সমস্ত বন্ধুদের বলছি,
ছোটবড়
------------------ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এখনো তো বড়ো হই নি আমি,
ছোটো আছি ছেলেমানুষ ব'লে।
দাদার চেয়ে অনেক মস্ত হব
বড়ো হয়ে বাবার মতো হলে।
দাদা তখন পড়তে যদি না চায়,
পাখির ছানা পোষে কেবল খাঁচায়,
তখন তারে এমনি বকে দেব!
বলব, "তুমি চুপটি ক'রে পড়ো।'
বলব, "তুমি ভারি দুষ্টু ছেলে' --
যখন হব বাবার মতো বড়ো।
তখন নিয়ে দাদার খাঁচাখানা
ভালো ভালো পুষব পাখির ছানা।
সাড়ে দশটা যখন যাবে বেজে
নাবার জন্যে করব না তো তাড়া।
ছাতা একটা ঘাড়ে ক'রে নিয়ে
চটি পায়ে বেড়িয়ে আসব পাড়া।
গুরুমশায় দাওয়ায় এলে পরে
চৌকি এনে দিতে বলব ঘরে,
তিনি যদি বলেন "সেলেট কোথা?
দেরি হচ্ছে, বসে পড়া করো'
আমি বলব, "খোকা তো আর নেই,
হয়েছি যে বাবার মতো বড়ো।'
গুরুমশায় শুনে তখন কবে,
"বাবুমশায়, আসি এখন তবে।'
খেলা করতে নিয়ে যেতে মাঠে
ভুলু যখন আসবে বিকেল বেলা,
আমি তাকে ধমক দিয়ে কব,
"কাজ করছি, গোল কোরো না মেলা।'
রথের দিনে খুব যদি ভিড় হয়
একলা যাব, করব না তো ভয় --
মামা যদি বলেন ছুটে এসে
"হারিয়ে যাবে, আমার কোলে চড়ো'
বলব আমি, "দেখছ না কি মামা,
হয়েছি যে বাবার মতো বড়ো।'
দেখে দেখে মামা বলবে, "তাই তো,
খোকা আমার সে খোকা আর নাই তো।'
আমি যেদিন প্রথম বড়ো হব
মা সেদিনে গঙ্গাস্নানের পরে
আসবে যখন খিড়কি-দুয়োর দিয়ে
ভাববে "কেন গোল শুনি নে ঘরে।'
তখন আমি চাবি খুলতে শিখে
যত ইচ্ছে টাকা দিচ্ছি ঝিকে,
মা দেখে তাই বলবে তাড়াতাড়ি,
"খোকা, তোমার খেলা কেমনতরো।'
আমি বলব, "মাইনে দিচ্ছি আমি,
হয়েছি যে বাবার মতো বড়ো।
ফুরোয় যদি টাকা, ফুরোয় খাবার,
যত চাই মা, এনে দেব আবার।'
আশ্বিনেতে পুজোর ছুটি হবে,
মেলা বসবে গাজনতলার হাটে,
বাবার নৌকো কত দূরের থেকে
লাগবে এসে বাবুগঞ্জের ঘাটে।
বাবা মনে ভাববে সোজাসুজি,
খোকা তেমনি খোকাই আছে বুঝি,
ছোটো ছোটো রঙিন জামা জুতো
কিনে এনে বলবে আমায় "পরো'।
আমি বলব, "দাদা পরুক এসে,
আমি এখন তোমার মতো বড়ো।
দেখছ না কি যে ছোটো মাপ জামার--
পরতে গেলে আঁট হবে যে আমার।'
কী সুন্দর করে একটি ছোট্ট বাচ্চার মনের গভীরে শুয়ে থাকা বা ঘুমিয়ে থাকা কথাগুলো রবি ঠাকুর তার কবিতায় চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন। এ কথা অস্বীকার করব না আমি যখন ছোট ছিলাম গামছা দিয়ে চুল বড় করতাম, আমার তো কোন দিদি ছিল না তাই বড় বড় পিসতুতো দিদিরা বাড়িতে এলে তাদের চুরিদারের ওড়না কে শাড়ি করে পড়তাম। সরস্বতী পুজোর দিন তো মহানন্দ কারণ বছরের ওই একটি দিন বড়দের মতো শাড়ি পরে রাস্তায় বেরোবো। দিন রাত অপেক্ষা করতাম কখন মায়ের মত বড় হব, আর মা আমার কথা শুনে চলবে। কেন জানেন মা সব সময় বলতেন —'এখন তুমি আমার কথা শোনো যখন বড় হবে তখন আমি তোমার কথা শুনবো '। বড় হয়ে গেলাম ঠিকই তবে আজ আর ভালো লাগেনা, মনে হয় ছোট ছিলাম ভালোই ছিলাম।
সেই ছোটবেলার অনুভূতি মনে করেই পাঠ করলাম। নিচের লিংক দিচ্ছি, আপনারা শুনে বলুন কেমন লাগলো।
👇👇👇

পোস্টের ধরণ | অডিও ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
অডিও রেকোর্ডিং মাধ্যম | আইফোন ১৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রতিটি কবিতা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে। আপনি দেখছি আজকে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছোট বড় কবিতা টি আবৃত্তি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার কন্ঠে এতো সুন্দর একটি কবিতা আবৃত্তি শুনে বেশ ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ জানবেন৷ আপনি আমার এই আবৃত্তিটা শুনলেন জেনে খুবই খুশি হয়েছি।
যে কোন কবিতা আবৃত্তি আমার বেশ ভাল লাগে। আর কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবৃত্তি শুনতে আরও ভালো লাগে। বেশ সুন্দর আবৃত্তি করলেন।সাথে মিউজিকটিও ভালো সিলেকশন করেছেন। সুন্দর একটি আবৃত্তি শুনতে পেয়ে বেশ ভালো লাগলো।
রবিঠাকুরের বিষয়টা অদ্ভুত ভাবে আলাদা৷ কি যে আছে ওনার লেখায় বা সুরে আমি নিজেই খুঁজে পাই না৷ শুধু ভেসে যাই৷ আপনি শুনলেন আমার আবৃত্তিটা খুব আনন্দিত হয়েছি আপু। ভালো থাকবেন।
https://x.com/neelamsama92551/status/1858532913127543225?t=MhQKVn9T3LVhiQJYVOItJA&s=19
আপু আপনার কবিতা আবৃত্তি সত্যিই অসাধারণ হয়েছে। এর আগেও আপনার কবিতা আবৃত্তি অনেক শোনা হয়েছে। দারুন একটি কবিতা আবৃতি চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন শুনে অনেক ভালো লাগলো।
আমি তো সেই ভাবে পারি না আপু। তাও চেষ্টা করি৷ আসলে আমার তো কোন তালিম নেই। এর ওর থেকে শুনে শুনে যতটুকু। আপনার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম৷ ধন্যবাদ নেবেন৷